বগুড়া জিলা স্কুল বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত। স্কুলের পূর্ব পাশে সার্কিট হাউস এবং দক্ষিণ পাশে আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠ অবস্থিত। স্কুলের সামনেই উত্তরপার্শ্বে কেন্দ্রীয় জেলা পোস্ট অফিস। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া, আর বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত “বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া”। স্ব-নামোজ্জ্বল, স্ব-মহিমায় ভাস্বর, ঐতিহ্যমন্ডিত ফুলের বাগান স্বরূপ এই বিদ্যাপীঠটি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ গঠন ও তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বগুড়াবাসী এই বিদ্যালয়কে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছিল তা যথাযথ ভাবে পালনের মাধ্যমে আজও সে প্রতিরোধ্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে শ্রেষ্ঠত্ত্বের যে মণিমুকুট তার মাথায় শোভিত হয়েছিল আজ অবধি সেই মুকুট উজ্জ্বল, অম্লান, অমলিন। আজও সে মুকুট থেকে বেরিয়ে আসছে মহা সম্মান এবং সাফল্যের দ্যূতি ও ঝলক।
“কোন এক বিদ্যাপিঠের কথা তোমায় শোনাই শোন রূপকথা নয় সে নয়, জন্মের শুরু থেকে জ্ঞানীজনের হাতে গড়া ও তার শীর্ষে উঠারকাহিনী শোনাই শোন”।১৮৪৪ সালে ইংরেজ প্রশাসক লর্ড হার্ডিঞ্জ যখন ইংরেজি শিক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে অগ্রাধিকার দেন তখন সেই ইংরেজি শিক্ষার জোয়ার স্পর্শ করে বরেন্দ্র ভূমিকে, স্পর্শ করল বগুড়াকেও। তাই ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বগুড়ায় জন সাধারণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ছিল বর্তমান জিলা স্কুলের ভ্রুনমূল এই ভ্রুণমূল নামক এই বিদ্যালয়কে ঐ সালেই বিদ্যোৎসাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর মিঃ রাসেল সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তদানীন্তন ডেপুটি কালেক্টর বাবু সূর্য্য কুমার মুখোপাধ্যায় -এর অশেষ পরিশ্রমে গভর্নমেন্ট –এর তত্ত্বাবধানে আনেন এবং “BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL” নামে আখ্যায়িত করেন। এই বিদ্যালয়টি গভর্নমেন্ট হওয়ার সাথে সাথেই তীব্র গতিতে উন্নতির পথে ধাবিত হতে থাকে এবং বাবু ভগবতী চরন ঘোষ মহাশয় -এর প্রথম হেড মাস্টার হন। এর পর পদ্মা মেঘনা ও যমুনায় বহু পানি বয়ে গেছে। বদলী হয়েছেন এই বিদ্যালয় অঘোর চন্দ্র সহ বহু প্রধান শিক্ষক। পরিশেষে ১৮৬৫ সালে BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL -এর নাম পরিবর্তন করে শুধু BOGRA ZILLA SCHOOL নাম রাখা হয় আর এই মাহেন্দ্রক্ষণে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু পার্বতিচরন রায় (বি. এ.)।
১৮৭৩-৭৪ সালে এই স্কুল গৃহটি তথা বিদ্যালয়টি সুত্রাপুরের “ব্রহ্ম সমাজ মন্দিরের কাছে অবস্থিত ছিল। পরবর্তীতে ১৮৮১-৮৫ খ্রিস্টাব্দে এটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং ঐ অব্দেই আগত প্রধান শিক্ষক বাবু গিরিশ চন্দ্র মিত্র (জে. সি. মিত্র) -এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুল গৃহটি ইটের তৈরী পাকা বিল্ডিং এ নির্মিত হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লেঃ গভর্নর স্যার রিভার থমসন এর নামে বিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে (সাতমাথার কোল ঘেঁষে) একটি থিয়েটার হল নির্মান করেন যা কাল ক্রমে বিদ্যালয়ের পাঠাগারে রূপান্তরিত হয়। সুন্দর কারুকার্য খচিত এই পাঠাগারটি আজও শিক্ষার্থীদের হৃদয় স্পন্দন হিসাবে কাজ করছে। এর ছাত্র সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে ১৯১৯ সালে এই বিদ্যালয়ে একটি দ্বি-তল ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। এতে হিন্দু মুসলমান ছাত্ররা ভাই ভাই এর মত একত্রে বসবাস করত।
কিন্তু রান্না ও খাওয়া দাওয়ার জন্য পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ডাইনিং ছিল। তৎকালীন এক অভিজ্ঞ সুপারিনটেনডেন্ট সাহেবের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও কর্ম প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সু-শৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে পারিবারিক আনন্দ উপভোগ করে বসবাস করত ও পাঠ অভ্যাস করতে সক্ষম হত। পাকিস্তান আমলে এই ছাত্রাবাসের নাম ছিল “মুসলিম ছাত্রাবাস” কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে -এর নাম রাখা হয ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ স্কুলের ছাত্র দোলনের নামানুসারে “শহিদ দোলন ছাত্রাবাস”। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে গণপূর্ত বিভাগ এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষনা করলে ধীরে ধীরে তা ছাত্র শূণ্য হয়ে পড়ে এবং ১৯৯৯ সালে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে ডাইনিং হল ২ টি ভেঙ্গে তদস্থলে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। আর পরবর্তীতে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্¡াবধানে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ঐতিহাসিক ছাত্রাবাসটি মেরামত করে বসবাসের উপয়োগী করা হয়। এই ছাত্রাবাসের নীচের ২ টি কক্ষ বর্তমানে টিফিনরুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এতে ২০০৪ জন ছাত্র ৫০ জন শিক্ষক এবং ১৫ জন কর্মচারির মোট ২০৬৯ জন মানুষের টিফিন তৈরি ও বিতরণ করা হচ্ছে।